মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী অভিজিৎ রায়সহ পাঁচজনকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া জঙ্গী আরাফাত রহমান গ্রেফতার হয়েছে। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। গ্রেফতারকৃত আরাফাত পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ জঙ্গীদের একজন। তাকে ধরিয়ে দিতে ২ লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। জঙ্গীদের যে দলটি অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করেছিল, আরাফাত সেই দলের সদস্য ছিল। সে নিজেও সরাসরি অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীকে কুপিয়েছিল। অভিজিৎ রায় মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে যান তার স্ত্রী। আরাফাত গ্রেফতারের ফলে ঢাকার কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয়, ব্লগার নিলয়, প্রকাশক দীপন হত্যাকা- সর্ম্পকে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। এর আগে অভিজিৎ হত্যায় মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার হয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় জঙ্গী সাজিদ। এ নিয়ে অভিজিৎ হত্যাকা-ের ঘটনায় ১১ জন গ্রেফতার হলো। সাভার থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার রাতে ঢাকার সাভার মডেল থানাধীন আমিনবাজারের বরদেশী এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও জেলা পুলিশের সম্মিলিত অভিযানে গ্রেফতার হয় আরাফাত রহমান (২৪)। তাকে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিবি কার্যালয়ে অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট আরাফাত রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরাফাত অভিজিৎ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। শুধু অভিজিৎ নয়, গত বছরের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই, বাংলাদেশস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা ও ইউএসএআইডিতে কর্মরত থাকা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা, খিলগাঁওয়ে ব্লগার নিলাদ্রী চট্রোপাধ্যায় নিলয় হত্যা ও শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনার প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকান্ডেও অংশ নেয়ার কথা বলেছে। আরাফাত ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির একুশে বই মেলায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লেখক ড. অভিজিৎ রায় (৩৮) ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে (৩০) হত্যার উদ্দেশে তার উপর ৩ সহযোগীসহ চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশে মুকুল রানা ওরফে শরীফের নেতৃত্বে তারা ওই হত্যাকা-টি ঘটায়। গ্রেফতারকৃত আরাফাত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গী।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৫ নবেম্বর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ইকবাল রোড থেকে আবু বক্কর সিদ্দিকী সোহেল (৩৪) নামে এক জঙ্গী গ্রেফতার হয়। সোহেল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ইন্টেলিজেন্স শাখার সদস্য। সোহেল অভিজিৎ রায় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। সোহেল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার (পলাতক) নির্দেশে অভিজিৎ হত্যায় অংশ নিয়েছিল। অভিজিৎ হত্যাকা-ের পর বাংলা একাডেমি ও আশপাশের ৪৬টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সোহেলকে অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর পিছু নিয়ে তাদের অনুসরণ করছিল বলে ধরা পড়ে। সোহেলের জবানবন্দীতে আরও অনেক তথ্য প্রকাশ পায়। সেই তথ্যের সূত্রধরে আরাফাতকে গ্রেফতার করা হয়। এখন পর্যন্ত অভিজিৎ রায় হত্যায় ১১ জন গ্রেফতার হলো।
অভিজিৎ নিহতের ঘটনায় তার পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. অজয় রায় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিভিন্ন সময় ১০ জন গ্রেফতার হয়েছে। হত্যাকা-ের প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মুকুল রানা ওরফে শরিফুল গত বছরের ১৯ জুন খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। গত বছরের অমর একুশের বইমেলায় অভিজিৎ রায়ের লেখা দুই বই প্রকাশিত হয়।
Leave a Reply